অদ্ভুত না?

আমার এক বান্ধবী ফেসবুকে খুব রেগুলার ছিল। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ছবি দিত ফেসবুকে। সেই ছবি খুব দামী ক্যামেরায় তোলা। ছবির নিচে ৪০০/৫০০ লাইক এবং প্রচুর কমেন্ট।

একদিন দেখি সেই বান্ধবী ফেসবুকে নাই। আমি ভাবলাম, কি ব্যাপার? আমাকে কি ডিলিট করে দিল? আমার অপরাধটা কি? অনেক ভেবেচিন্তেও কোন অপরাধ খুঁজে পেলাম না।

আমি তার প্রোফাইলে গেলাম। না সত্যিই তার কোন আপডেট নাই। বহুদিন কিছু পোস্টও করে না। আমি তার লিস্টে আছি। আমি তাকে নক দিলাম-

'কি ব্যাপার? আপনার পাত্তা নাই কেনো?'

দুইদিন পরে রিপ্লাই আসলো, 'আমি এখন ফেসবুকে ঢুকি না।'

'কেনো?'

'লোকজনের সুখী সুখী ছবি দেখলে ঈর্ষা লাগে।'

আমি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলাম কিছুক্ষণ। কথাতো ঠিকই। আমাদের প্রত্যকের কি একইরকম ঈর্ষা হয় না?

'সুখটা আসলে কি?' আমি তাকে জিজ্ঞাস করলাম।

সে বললো, লোকজন নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাচ্চাকাচ্চার ছবি দিচ্ছে। নতুন নতুন রেস্টুরেন্টে ছবি দিচ্ছে। নতুন ড্রেসের ছবি দিচ্ছে। একজন হুট করে প্রমোশন পেয়ে গেল, আমি কেনো পাচ্ছি না।

আই সি। তাইলে জামা, নতুন জায়গায় বেড়ানো, প্রতিদিন নতুন রেস্টুরেন্টে চেক ইন দেয়া মানে সুখ। আর আমি যদি সেখানে যেতে না পারি তাহলে সেটা অসুখ! অসুখ না ঈর্ষা?

আসলেইতো তাই। মনে আছে থ্রি ইডিয়টস মুভির সেই বিখ্যাত ডায়লগটা? বন্ধু পাশ করলে খারাপ লাগে। কিন্তু ফার্স্ট হয়ে গেলে সেটা কোনভাবেই মানা যায় না...মনে হয়, ওতো আমার বন্ধু, সারাদিন আমার সাথেই থাকতো, আমি কোনমতে পাশ করলাম, অথচ ও কিভাবে ফার্স্ট হয়ে গেল? এটা কোনভাবেই মানা যায় না।

এই যে, ওর আছে, আমার কেন নাই - সম্ভবত এখান থেকেই নানা ঝামেলার শুরু। অথচ আমার সবকিছু পাওয়ার কথা ছিল কি? না কি দরকার আছে?

একটা মানুষের চিন্তাধারা, পড়ালেখা, জীবন যাপনের সমষ্টি হলো, ওর কাছে যা আছে সেটা। অথচ আমি কম্পলিটলি আলাদা একটা জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে, আলাদা একটা চাকুরী করে, আলাদা একটা ব্যাকগ্রাউন্ডে পড়ালেখা করে ওর মতো হতে চাইছি। অদ্ভুত না?

সেদিন দেখলাম, জনৈক ছেলে তার এক্স প্রেমিকাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। কারণ হলো, তাকে কেন বিয়ে করে নাই। অথবা বিমান ছিনতাই করার চেষ্টা - গোটাটাই ঈর্ষা। এক সময় তুমি আমার ছিলা। আমার প্রেমিকা ছিল। আমার বউ ছিলা একসময়। এখন অন্যের প্রেমিকা। কি অদ্ভুত? আমাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যের প্রেমিকা হয়ে, হাসি হাসি ছবি দাও কোন সাহসে??

তার মানে, আমাকে ছেড়ে দিলে হাসতে মানা। অদ্ভুত না?

ঈর্ষাকে অনেকে বলে যে, ঈর্ষা যদি পজিটিভ হয় তাইলে ঠিক আছে। আমার মনে হয় না।

ঈর্ষা জিনিসটাই খারাপ। ঈর্ষা থেকে হিংসা, হিংসা থেকে ঘৃণা, ঘৃণা থেকে বাকি সহিংসতা।

কিন্তু যে অন্যের বাচ্চার ছবি দেখে ঈর্ষান্বিত হয়, কিংবা তার বাচ্চা ফার্স্ট হয়, আমারটা কেনো না - তাকে কি দিয়ে বুঝাবো? কারণ এই ভাবনাটা পালটানো কি অত সহজ? কারণ এই ভাবনার মূলে আছে না পাওয়ার বেদনা অথবা বঞ্চনার ইতিহাস।

তাই রবীন্দ্রনাথ বলেন -

'ঈর্ষা জিনিসটার মধ্যে একটা সত্য আছে, সে হচ্ছে এই যে, যা কিছু সুখের সেটি সকলেরই পাওয়া উচিত।'

কিন্তু সুখী হওয়া কি এত সহজ? এত সহজ?

Comments

  1. Literally, to be happy in your life is so easy if you are satisfied with what you get but at the same time it is truely that much difficult if you are not.So I think its all in your mind whether you be happy or not.

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

বিশ্বের যে অস্বাভাবিক জায়গাগুলিকে স্থান দিতে পারেন আপনার ভ্রমনের তালিকায়।