শেষ দেখা...।
শেষ দেখা...।
তোর মাকে আমায় দিবি? আমি তাহলে আমার মাছটা তোকে দিয়ে দেবো।
অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া ছেলে মৃনাল তার সাথে থাকা বন্ধু মুকুলকে প্রায়ই এমন আবদার করতো। মুকুল মাছের লোভে বলতোহুম, দেবো বৈকি। এরপরের বার যখন মা আসবে তখনই তোকে দিয়ে দিবো। কিন্তু বরাবরের মতোই মুকুল তার মা আসলেমৃনালের কথা ভুলে যেত। আর মুকুল দূর থেকে মুকুলের মায়ের আদর দেয়া দেখতো।ভাবতো মায়েরা বুঝি এমনই হয়। কেমনকরে আদর করে! দেখলে কেমন বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। তার মা জন্মের সময় মারা গেছে।মার ব্যাপারে এটুকুনই জানে সে।
সেই মৃনাল আজ অনেক বড় হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে একটা মেডিকেল কলেজে প্রফেসর হিসেবে জয়েন করেছে।হাসপাতালেযখন তার মা বয়সী কাউকে দেখে মৃনালের খুব ইচ্ছে হয় একবার বলতে মা আমাকে একটু আদর করে দিবেন? কিন্তু বলা হয়না।
আজ হঠাত করেই বড়দাদার ফোন পেল মৃনাল। তার হাসপাতালে একজন মহিলা পাঠিয়েছেন। অবস্থা খুব খারাপ। ভালো করেদেখতে বললো।মহিলা নাকি মৃনালের খুব আপণ কেউ। কিন্তু মৃনাল জানতো তার এই দুনিয়ায় আশ্রমের বড়দাদা বাদে আর কেউআপন নেই। যাহোক, মহিলাকে বেশ ভালো করেই দেখলো মৃনাল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃনালকে Death declare করতে হল।Death due to multi organ failure. লেখাটা লিখে কেমন একটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো মৃনালের। এই মহিলা নাকি তার আপনকেউ ছিলো। কে এই মহিলা?
কিছুক্ষন পর আশ্রমের বড়দাদা এলেন। death body টা দেখে মৃনালের হাতটা শক্ত করে ধরলেন। এ তোর মা মৃনাল। মৃনালকিছু বলতে পারেনি সেদিন।শুধু মনে মনে একবার বলেছিল আমাকে একটু আদর না করেই চলে গেলে মা?🙂
সেবার এক জানোয়ার হিংস্রভাবে অত্যাচার করেছিল রাবেয়াকে। পরিচয়হীনভাবে জন্ম হয়েছিলো মৃনালের। লজ্জায় তাইমৃনালকে আশ্রমে রেখে গিয়েছিলেন রাবেয়া।আজ তার ছেলের সাথে দেখা হল।কিন্তু তা মৃত্যুটেবিলে....
#শশব্দগল্প
#ছোট্টগল্প
মাতৃপ্রেম,প্রেম বা বন্ধুত্ব যে কোনো বিচ্ছেদই আমাদের বেশ কষ্ট দেয়। যেই ছোট গল্পটা তুমি আমাকে নমিনেট করেছ, আমি তোমারসেই গল্পের বাকি অংশ লিখার চেষ্টা করলাম।
শেষ হার…।
মানুষ যখন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌছায়,আর তখনই তার প্রিয় মানুষটি হারিয়ে যায়।
মৃণালও জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছে সবথেকে বড় হার তার মায়ের ভালবাসা না পাওয়া।সারাজীবন সে মায়ের ভালবাসাখুঁজেছে।
মেডিকেলে পরার সময় তার অপরাজিতার সাতে পরিচয় হয়েছিল,তারপর বন্ধুত্ব। কখন তাদের বন্ধুত্ব ভালবাসায় পরিণতহয়েছিল তারা কেওই জানত না।মৃণালের অনাথজীবন,মায়ের ভালবাসা না পাওয়ার মাঝেও একটাই পাওয়া ছিল সেটা, অপরাজিতা।
গত চারদিন হলো অপরাজিতার সাথে ব্রেক-আপ হয়ে গেলো।টানা ছয় বছরের সম্পর্ক মৃণালের। এই কয়েকটা দিনে তার কোনোখোজ নেইনি, আর খোজ নেওয়ার চেষ্টাও করেনি।
রাত্রে খাওয়া-দাওয়া না করেই কাদতে কাঁদতে অবশেষে ফোনটা ভাইব্রেট মুডে রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল মৃণাল।-
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে ফোনে চার্জ নেই। চার্জারটা লাগিয়ে ফোনটা অন করে মৃণাল হতবাক।
অপরাজিতা টেক্সটে ইনবক্স ফুল হয়ে আছে।
- জানি না তোমার সাথে এটা করা ঠিক হলো কিনা।তবে এই মুহুর্তে আমি ভাল আছি।
- বিশ্বাস করো-আমি নিরুপায়। কেন জানি আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।
- আমার সাথে এমন কেন হয়.? কেন তোমার প্রতি বিরক্ত হয়ে যায়.? জানি, আমি খুব খারাপ। তোমার ভালবাসার মুল্যদিতে পারিনা বিন্দুমাত্র।
- আমি কি ভুল করে ফেললাম.?ব্রেক-আপ করাটা বোধহয় ঠিক হলো না। তুমি নিশ্চয় কাঁদছ.? আমার কেন জানি কান্নাপাচ্ছে না।
আমি এখন মুক্ত পাখির মত অনুভব করছি।টের পাচ্ছো.??
- ঘুম আসছে না।গতকাল অব্দি তো ভালোই ছিলাম। তোমার বোকামো আর পাগলামোটা খুব মিস করছি..
- ফোন টা রিসিভ করছো না কেন.? ভাল লাগছে না।
প্লিজ কথা বলো।
- আর কত ফোন দেবো.? প্লিজ, রিপ্লাই তো দাও।
- ভীষণ কান্না পাচ্ছে। ফোনটা রিসিভ করো।
- আমার ভুল হয়েছে মৃণাল। তুমি ছাড়া আমি এক মুহুর্ত ভালো থাকতে পারছিনা। ভালোবাসি খুব।
- ফোনটা বন্ধ করে ফেললে.? এভাবে তুমি অভিমান করে থাকতে পারলে.? আমার যে-বিশ্বাস হচ্ছে না।
টেক্সগুলো শেষ করে অপরিজিতা ওয়াশরুমে গেল।চোখ দুটো ফুলে গেছে। জোর করে হাসার চেষ্টাও করলো লাভ হলো না।
হবেই বা কিভাবে.? চার বছরের সম্পর্ক্টা চুকে দিয়ে এলো। রিলেশনের আড়াই বছর পর থেকে এই গত দেড় বছরে মোট তেরো বারব্রেক-আপ হয়েছে।
মৃণাল টেক্সট এর রিপ্লে দিলঃ
-“অপরাজিতা, প্লিজ। আই এম সরি। তোমাকে ছাড়া আমার সত্যি খুব কষ্ট হচ্ছে।এই শেষ বার, আর তোমাকে কাদাবো না।তোমাকে ছেড়ে যাবার কথা বলবো না। ক্ষমা করে দাও প্লিজ.""--
টেক্সটা অপরাজিতা পড়ছে আর তার চোখ দিয়ে টুপ টুপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। নিশব্দে কেঁদে নিলো কিছুক্ষণ।
তারপর রিপ্লাই বক্স ওপেন করে টাইপ করলো —
-"কিন্তু,আমি এই প্রথম এবং শেষবারের মত তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি। ভালবাসতে হলে একটু যত্ন করতে হয়। ভালবাসার মানুষকেনা পারলেও ভালবাসাকে আগলে রাখতে হয়,নয়ত সে হারিয়ে যায়।আর যত্ন না থাকলে সেটাকে এমন পানসে মনে হয়।জেলখানারর কয়েদিই লাগে। জোর করিনি তো কখনো.!তবুও কেন এত অসস্ত্বি.!!
""সম্পর্কে ভালবাসতে না পারলেও সেটা গ্রহন করার সামর্থ্য রাখতে হয়, নতুবা, ভালবাসা আশা করাটা স্বার্থপরতা।আর,আমার ভালবাসায় স্বার্থপরতার কোনো স্থান নেই। তোমার তো ভালবাসা গ্রহণ করার মতোও সাহস বা ক্ষমতা নেই।জোরকরে আর কি দেবো.!!""--
টেক্সটা আরেকবার চেক করে সেন্ড অপশনে ক্লিক করলো অপরাজিতা। তারপর সিমটা ভেঙে চোখে পানি ঝাপটা দিয়ে ধুয়েমিউজিক প্লেয়ারে গান ছাড়লাম:--
""তুমি সুখও যদি নাহি পাও,
যাও সুখেরও সন্ধানে যাও।""-
উদ্দেশ্য আপাতত ঘুম। পরে যা হবার হবে।
অপরাজিতার সাতে তার হাজারো স্মৃতি তাকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দেয়।আজ তাঁর জীবনে সব কিছুই অর্থহীন।
তাই বিরহের বাণীতে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন,প্রেমের আনন্দ থাকে স্বল্পক্ষণ কিন্তু বেদনা থাকে সারাটি জীবন।
মৃনাল ওই দিনও কিছু বলতে পারেনি আজ কিছু বলতে পারেনি শুধু মনে মনে একবার বলেছিল তুমিও আমাকে এ রেখে চলেগেলে অপরাজিতা ?
শেষ থেকে শুরু …।
উদ্দেশ্য আপাতত ঘুম হলেও অপরাজিতা দুচোখের পাতা এক করতে পারল না। তাও বালিশে চেপে শুয়ে রইল।তার কোন কিছুইভাল লাগছে না।কিছু ব্যাপার হবার নয়, তবুও হয়। কেমন জানি একটা কষ্টদায়ক অনুভূতি। চিৎকার করে কথা বলা মানুষটাওএখন নীরব।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। বাহিরে পাখি ডাকছে। কি ভীষণ জোড় তার গলায়! যেন অপরাজিতাকে চোখ রাঙ্গিয়ে বকা দিচ্ছে ,
- কিসের এত ঘুম এই সন্ধ্যাবেলায়?
বাহিরে এখন হালকা বৃষ্টি!!!
ঠাণ্ডা বাতাস, কিন্তু তার কেমন যেন অস্বস্তি লাগছিল। মনে হচ্ছে মৃণালের সাতে ঝগড়া করে সে একমুহুর্তে ভাল থাকতে পারে না।আর কিছু না ভাবে ভেবে ফোনটা হাতে নিয়ে মৃণালকে কল করলো কিন্তু কোন লাভ হল না।
- বার বার ধাতব কণ্ঠে একটা সুর ভেসে আসল, আপনি যে নাম্বারে কল করেছে সেটি এই মুহূর্তে বন্ধ আছে।
তারপর অপরাজিতা মৃণালের উদ্দশ্যে কিছু মেসেজ টাইপ করলঃ
- কই তুমি?
- ফোনটা কি বন্ধ না করলে চলে না তোমার?
- আমার ভুল হয়ে গেছে, আমার মাথা ঠিক ছিল না। উল্টা পাল্টা অনেক কিছু বলে ফেলেছি। Pls আমাকে মাফ করে দাও।
- এমন বিচ্ছেদ আর ভাল লাগছে না।
- আমি জানি, আমি যেমন তোমাকে ছাড়া ভাল নেই তুমিও আমাকে ছাড়া ভাল নেই।
- আমরা কি পারি না সব ঠিক করে নিতে?
- ফিরে পারার ফিরে আসার সময় কি শেষ হয়ে গেছে মৃণাল?
- ভালবাসি খুব।
তারপর ফোনটা বিছানায় রেখে বারান্দায় চলে গেল সোজা। বাহিরে প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া চারিদিক উলট পালট করে দিয়ে যাচ্ছেআর অন্য দিকে অপরাজিতার মন ভিতরে ভিতরে উলট পালট হয়ে যাচ্ছে।
বেচারী কামিনী বাতেসে দুলছে, দুলে দুলে সুবাস ছড়াচ্ছে। বৃষ্টি ভেজা বাতাসে বিষণ্ণ বেলী ফুলটাও হাওয়ায় দুলছিল।
হঠাত করে মৃণালের দেয়া প্রথম চিঠিটার কথা মনে পরল, বুকের ভিতরটা চিন চিন ব্যাথা হচ্ছে তার।বাহিরে হাত বাড়িয়ে টিপটিপ বৃষ্টি ছুঁয়ে মৃণালের ফিরে আসার প্রতীক্ষা করছে। অনেকটা সময় পার হল,
কোন খোজ নাই মৃণালের।
অপরাজিতা জানে মৃণাল ভাল নেই তাই সে বার বার চেষ্টা করতে থাকে।কোন উপায় না পেয়ে, মৃণালের বন্ধু মুকুলকে ফোন দিলসে কিন্তু মুকুলও কোন খোঁজ দিতে পারলো না।
বৃষ্টি থেমে গেছে কিন্তু অপরাজিতার চোখের পানি থামছে না।
তার এখন হাজারো স্মৃতি মনে পরছে, রাত বাড়ছে সাতে চারাপাশে জোনাকি পোকার আনাগোনা। কেও একজন তাকে বলেছিল, মুঠোভর্তি জোনাকি পোকার আলোকে আলাদা করে তাকে বোতলবন্দী করে দেবে।
অন্যদিকে মৃণাল,পানি ছাড়া মাছের মত ছটফট করতে লাগল। রাগের মাথায় সে তার মোবাইলটা ভেঙ্গে ফেলেছে। তাইঅপরাজিতার ডাক তার কাছে পোঁছাল না। ড্রয়ার থেকে পুরানো একটা ফোন বের করে তাতে সিমটা লাগিয়ে অপরাজিতাকেফোন করল।
- হ্যালো!!
কিছু বলার আগেই অপরাজিতা হু হু করে কেঁদে উঠল আর বললোঃ
- Pls ছেড়ে যেও না।
মৃণাল আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বললঃ
- বিয়ে করবা আমাকে অপরাজিতা?
- সব হারিয়ে আমি তোমার ভালবাসায় বেঁচে আছি, তোমাকে হারাতে চাই না।
আজ রোদ উঠুক বা বৃষ্টি পড়ুক,,
তাতে কি আসে যায়!
তুই হাত ধরলেই চলে যাবো
যেদিকে দু'চোখ যায়......
অপরাজিতা রাজি!!!
Comments
Post a Comment